সুইসব্যাংকে বাংলাদেশীদের
৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা গচ্ছিত রাখার আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই জাতিসংঘ উন্নয়ন
কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার
বৃদ্ধির খবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে প্রতিবছর গড়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে ৮০ কোটি
ডলার বা দেশীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকার মতো। মাথাপিছু পাচার হচ্ছে গড়ে ২০৫
ডলার। টাকায় যা প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে
১৯৭০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য,
রেমিটেন্স ও হুন্ডির মাধ্যমেই মূলত টাকা পাচার
হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের অপর একটি সংস্থার জরিপে বলা
হয়েছে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ
রেমিটেন্স আসে তার প্রায় ৪০ শতাংশই আসে হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে ওই পরিমাণ বৈদেশিক
মুদ্রাও দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল যে ৮টি দেশ নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি
করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের
অবস্থায় দ্বিতীয়, আফ্রিকার আইভরি কোস্টের
পরই।
দেশ থেকে টাকা পাচারের
পেছনে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি, অনিয়ম ও আইন
প্রয়োগে শিথিলতা। এসব বন্ধ না হলে টাকা পাচারও বন্ধ হবে না। সরকার যে একাজ করবে
সেটা কি বিশ্বাস করা যায়?
স্বাধীনতার আগে
পাকিস্তানি শাসকরা টাকা পাচার করে নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। স্বাধীনতার পর টাকা
পাচার হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে। এর সঙ্গেও জড়িত শাসকরাই। ক্ষমতাবান রাজনৈতিক
ব্যক্তিদের সহায়তা ছাড়া কখনও দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হতে পারবে না। অগণতান্ত্রিক
জবাবদিহিতাহীন সরকারের আমলে তাই টাকা পাচার বাড়ে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা
পাচার হয়ে গেছে। ২০১০ সালে পাচার হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ৫২৮
কোটি টাকা। অর্থাত্ ১ বছরে বিদেশে টাকা পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। এই পাচার বন্ধ না
করে শুধু উন্নতির ঢোল বাজালে কি দেশের ফোকলা হওয়া ঠেকানো যাবে?