Friday, July 18, 2014

তারেক রহমানের স্বপ্ন কিন্তু লন্ডনে আরামে বসে কি বাস্তবায়ন করা সম্ভব

প্রথমে আপনাদের সামনে আলোচনা করা যাক বাংলাদেশের আগামী দিনের প্রধানমন্তী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্তরসুরী তারেক জিয়ার বাংলাদেশ নিয়ে কিছু চিন্তা ও পরিকল্পনা। 
  
নিজের চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির পালা বদলে এবং ভৌগোলিক কারণে গ্লোবাল ভিলেজে বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার নাম। কিন্তু এই সম্ভাবনার সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সবার দায়বদ্ধতা, কর্মকাণ্ড ঐক্য ও অর্জনের ওপর। তাই স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে প্রত্যেককে কিছু কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠা প্রয়োজন। তাহলে একটি ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকেও একটি উৎপাদনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দুই দশকের বেশি সময়ের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে আমার নিজেরও চিন্তা, চেতনা এবং কর্মকাণ্ড জুড়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা।  বিশ্ব মানচিত্রে যার পরিচয় হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে স্বার্থক, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানব সম্পদে ঐশ্বর্যমণ্ডিত, সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে।

একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি, শিক্ষা কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন,  পরিবেশ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও স্থানীয় উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার কিছু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না, শুধু গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই।

তিনি বলেন, ‘আন্তরিকভাবে চাইলে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে ক্ষুধা বা দারিদ্র্য থাকবে না। তবে এসব পরিকল্পনা তখনই বাস্তবায়ন হতে পারে যখন দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির প্রতি নিবেদিত সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত একটি সরকারের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের ধারণা জনসংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে আগামী ২৫ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কমে যাবে কৃষি ও আবাসন জমির পরিমাণ। কোটি কোটি মানুষ বঞ্চিত হবে খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধা থেকে। ঘনীভূত হবে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট। যোগাযোগ ও যানজট সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠবে। শিক্ষা উপকরণ এবং অব্যব্যবস্থাপনায় কমবে শিক্ষার হার। সঠিক কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত বেকারের হার বাড়বে। দরিদ্র  জনগণ হয়ে উঠবে আরও দরিদ্র। ক্ষমতাধর দুর্নীতিবাজ ধনীরা হয়ে উঠবে আরও ধনী। সন্ত্রাস আচ্ছন্ন করে তুলবে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি অঙ্গনকে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বাড়তে থাকবে সামাজিক অস্থিতিশীলতা। চলতে থাকবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে ঘটতে পারে পরিস্থিতির অনাকাঙ্খিত ও নজিরবিহীন অবনতি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ যেভাবে চলছে তাতে এমনটিই হবে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। তবে ভবিষ্যৎ আমাদের নিজেদেরই হাতে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি হবে না। হলেও একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা গড়ে তুলবো একটি উৎপাদনশীল বাংলাদেশ, ইনশাল্লাহ।

তারেক রহমান বলেন, ‘পাবলিক সেক্টরের নানা অব্যবস্থাপনা ও অকার্যকারিতার মাঝেও দেশটা কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ভালো করছে, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেশের প্রাইভেট সেক্টরের। পাশাপাশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেশটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাদের পরিশ্রম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ আমাদের প্রতিনিয়ত আশান্বিত করে তোলে। সাধারণ মানুষের প্রেরণা নিয়ে এবং তাদের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি উন্নয়ন উৎপাদনের রাজনীতি নিশ্চিত করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

তারেক রহমান তার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে আরও বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা সম্ভব ছোট-খাট ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি করা সম্ভব অর্ধকোটিরও বেশি কর্মক্ষেত্র। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। শহরগুলোর প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার পাশাপশি গ্রামগুলোতেও আধুনিক জীবনের উপকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাতে করে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠবে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে একটি উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মডেল হিসেবে। তবে এর জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।

তারেক বলেন, ‘দল-মত বিশ্বাস ও দর্শন যার-যার; কিন্তু দেশটা আমাদের সবার। দেশটা কারো একার নয়, কারো বাবার নয়, আমাদের সবার।

কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে তারেক রহমান সুস্পষ্টভাবে কিছু নীতিমালা তুলে ধরে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও কৃষিকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে পরিণত করা এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, ‘কৃষি ভর্তুকি নিশ্চিত করতে হবে যাতে কৃষিখাতের সব ভর্তুকি আমদানিকারক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে না যায়।

শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন দূরে থাক দেশের তথাকথিত সরকার পাবলিক পরীক্ষাগুলোর আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির তথাকথিত বিশ্বরেকর্ড গড়ে দেশীয় মেধার মানদণ্ডকে শুধু নষ্টই করছে না বরং আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিযোগিতায় দেশকে হাসির পাত্রে পরিণত করছে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে করতে হবে একাধারে আধুনিক, গণমুখী, কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর।

চাকরিতে কোটা প্রথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেধাবীরাই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। সেই মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে সরকারি চাকরিতে কোটার হার সর্ব্বোচ্চ শতকরা পাঁচভাগে নামিয়ে আনা যেতে পারে।

শিল্প ও বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘গত ছয় বছরে বর্তমান অবৈধ সরকারের ভ্রান্তনীতি আর চাটুকারিতার রাজনীতির বলি হয়ে দেশের গার্মেন্টস আর শ্রম রপ্তানিতে ধ্স নেমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ পা দিয়েছে বিনিয়োগবিহীন প্রবৃদ্ধির ফাঁদে। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ এখন শূন্যের কোঠায়। গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিল্প ও কল-কারখানা।

তিনি বলেন, ‘শ্রম, আবাসন, বিদ্যুৎ, বিপণন ও শিক্ষা এই পাঁচটি সুবিধার দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ কয়েকটি শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ শুরু করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আরেকটি সাবমেরিন ক্যাবল বসানো দরকার, দরকার ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো, কমানো প্রয়োজন ব্যান্ডউইথ প্রাইস।

অপরিকল্পিত নগরায়ন সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের প্রধান দুটি শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদলে মেট্রোপলিটন এরিয়া গড়ে তোলা সম্ভব। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর এই তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত হতে পারে ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া এবং পুরো চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে গঠিত হতে পারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান এরিয়া।

তারেক রহমান বলেন, ‘ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমাতে চাকরি, শিক্ষা নিরাপত্তা ও অবকাঠামো এই চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোয় কয়েকটি আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এমন ২০টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্যাটেলাইট শহর তৈরি করে প্রতিটিতে বর্তমানে ঢাকায় বসবাসকারী পাঁচলাখ লোককে স্থানান্তর করা গেলে ঢাকার ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। তবে এইসব স্যাটেলাইট শহর এমনভাবে নির্মিত হতে হবে যাতে চাষযোগ্য জমি নষ্ট না হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঘন্টায় ৬০ মাইল বেগে এমনভাবে রেল সংযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা করতে হবে যাতে রাজধানীর ৫০ থেকে ৬০ মাইল দূরত্বের জেলাগুলোতেও মাত্র এক ঘণ্টায় যাওয়া সম্ভব হয়।

 উপরের তারেক রহমানের চিন্তাশীল বক্তব্য শুনে আমার মত অনেকেরা আনন্দিত হবেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আমরা যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখলাম ডিজিটাল  বাংলাদেশের কথা শুনে আমরা নিজের ভোট দিবার অধিকার হারিয়ে ফেললাম।  

এখন তারেক রহমান আমাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্চছেন কিন্তু তিনি কি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। তিনি দেশের মানুষের আধীকার আদায়ের কথা বলেন কিন্তু  কিন্তু নিজে বসে আছেন বিদেশে। আরামে দিন  কাটাচ্ছেন এর নিরীহ মানুষ গুলো পুলিশের গুলিতে নিজের প্রান হারাচ্ছেন। হাজার মানুষের বুকের  তাজা রক্তের বিনিময়ে যদি আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয় এবং বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে তবে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসে ক্ষমতায় বসবেন হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রেী। মুল কথা হল আমার ভাইয়ের রক্তের উপর দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু কেন ?

স্বপ্ন দেখা ভাল কিন্তু সেই স্বপ্ন কে বাস্তবায়ন করতে হবে আপনাকে। দেশের মানুষের মুক্তির কথা আপনি যখন বলবেন তখন মাটে গিয়ে আপনাকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে। এতে  আপনাকে জেলে যেথে হবে। নির্যাতিত হতে হবে তার পরে বাংলার মানুষের মুক্তি হবে। গনত্রন্ত পাবে এক নতুন ধারা। বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে বাচাতে গিয়ে নিজের বুক পেতে দিবে। কিন্তু আপনাকে বাংলাদেশের মানুষের পাশে গিয়ে দাড়াতে হবে। 

লন্ডন আরামে বসে আপনি কখন বাংলাদেশের মানুষের অর্থনেতিক,গনত্রান্তিক মুক্তির কথা বলতে পারেন না এবং সেটা কখন সম্ভব নয় । 



মোঃ সাইদুর রহমান 
ফ্রিলান্স সাংবাদিক, অনলাইন একটিভিস্ট