Saturday, June 21, 2014

আদালতের ফাইনাল পরীক্ষা

বেশ কয়েক দিন আগে থাইল্যান্ডের একটি বিষয় নিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোচনার বন্যা ভয়ে গিয়াছিল পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের বড় বড় পত্রিকা গুলো বড় বড় হেডলাইনে সংবাদ প্রচার করেছিল বিষয়টি ছিল থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রা জন মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয় পাশাপাশি নিয়োগ করা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী গত বছরের নভেম্বরে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে থাইল্যান্ডে এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হয় বিরোধী দল সেই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বাতিল হয়ে যায় সেই নির্বাচন প্রসংশার বিষয় ছিল থাইল্যান্ডের আদালত কতটা স্বাধীন এবং শক্তিশালী আইনের শাসন কতটা কার্যকর
প্রথমে থাইল্যান্ডের বিষয়টা আলোচনার করার অর্থ হল যে,থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের খুব সুন্দর একটি মিল রয়েছে থাইল্যান্ডের সাধারন নির্বাচনে প্রধান বিরুধী দল অংশ গ্রহন করে নাই তেমনি বাংলাদেশে বিগত জানুয়ারীর নির্বাচনে প্রধান বিরুধী দল অংশ গ্রহন করে নাই থাইল্যান্ডের যেমন ইংলাক শিনাওয়াত্রা দল বিরুধী দল বিহীন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নির্বাচিত হয়েছিলো তেমনি শেখ হাসিনার দল বিরুধী দল বিহীন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে বিনা ভোটে জয়লাভ করেছিল কিন্তু ভিন্নতা হচ্ছে নির্বাচনের পর থাইল্যান্ডের আদালত সরকার প্রধানকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ   দেয়েছিল এবং সেই সাথে বিরুধী দল বিহীন নির্বাচনকে বাতিল করে দেয় কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের আদালত এই রকম কোন  দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি নিছে আমি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব যে আদালত চাইলে থাইল্যান্ডের আদালত মত বাংলাদেশের আদালত এই রকম একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারত কারন হল ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হয় নাই    
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধানের বৈধতা নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিয়ে রুল জারি করেছিল জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালামের দায়ের করা রিট আবেদনে হাইকোর্ট ওই রুল জারি করে রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম
রিট আবেদনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যায় এক্ষেত্রেনা ভোটের কোনো বিধান রাখা হয়নি অথচ সংবিধান স্পষ্ট বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ গঠিত হবে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা সংবিধানের পরিপন্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট অ্যামিকাসকিউরি নিয়োগ দেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট অ্যামিকাসকিউরি নিয়োগ দেন . কামাল হোসেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ছাড়াও রয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ
জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন আমরা জানি যে,বাংলাদেশে একটি সরকার নির্বাচিত হতে হলে ১৫১ টা আসনের প্রয়োজন হয় কিন্ত জানুয়ারীর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টা  আসনে ১৪ দলের সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা সংবিধানের , ১১, ২৭, ৩১, ৬৫ (), ১২১ ১২২ () অনুচ্ছেদের পরিপন্থী
পরিষ্কার ভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য সংবিধানের উপরের অনুচ্ছেদে কি বলা হয়েছে এখন আমি চেষ্টা করব আলোচনা করার জন্য
সংবিধানের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে
সুতরাং সংবিধানে বলা হয়েছে প্রজাতন্তের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন এবং
জনগন সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবে কিন্ত জানুয়ারির নির্বাচনে জনগন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে নাই ১৫৪ টি আসনে জনগনের ক্ষমতার প্রয়োগ ছাড়া সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে  সরকার গটন করা হয়েছে যা  সংবিধানের পরিপন্তি
সবচেয়ে গুরুত্ত পূর্ণ বিষয় হল যে, সংবিদানের ৬৫() এবং ১২২() অণুচ্ছেদ সংবিধানের ৬৫() অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের () দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন ১২২() অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার-ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে
এখনে ১২২() সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, প্রাপ্ত বয়স্কের  ভোটাধিকারের ভিতিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে কিন্তু জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা ভোটে ১৫১ আসনের পরিবর্তে ১৫৪ আসনে সংসদ সদস্যরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন যেখানে সরকার গটন করতে ১৫১ আসনের প্রয়োজন হয়    
এখন আলোচনা করা যাক যে আমি প্রথমে বলেছিলাম যে আদালতের ফাইলান পরীক্ষা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখন একটি সাধারন ধারনা জন্ম হয়ে গেছে যে সরকার যা চায় আদালত তা রায় দেয় তার বাস্তব প্রমান হল, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাবস্তা চায় নাই তাই আদালত কৌশলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাবস্তা বাতিল করে রায় দিল যা জনগনের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে জনগনের মনে আরও সন্দেহ তৈরি হয়েছ স্ক্যইপ সংলাপ প্রকাশ হওয়ার পর সেখানে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়েছে কিভাবে সরকার বিচার বিভাগকে শাসন করছে এই সমস্ত  ঘটনার জন্য জনগনের মনে সন্দেহ গণীভূত হয়েছে প্রকট
কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে  সাম্প্রতিক এক বিষয় নিয়ে  বলেনকনটেমপ্ত অব কোর্ট (আদালত অবমাননা) হলে আই ডোন্ট কেয়ারসুতরাং এটা থেকে বোজা যাচ্ছে যে মাননীয় প্রধানমন্তী কতটুকু আইনের প্রতি স্রদ্দাশীল পরবর্তীতে এই সংবাদ বাংলাদেশের একটি ইংরেজী সংবাদ পত্রে  প্রকাশিত করা হলে সেটি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়কিন্তু আদালত সে  বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই যা সত্যি অভাক করেছে আমার মত অনেকে এই কথাটি যদি কোন সাধারন মানুষ বা বিরুধী দলের কেউ বলতেন তাহলে এত দিনে ওনার কি যে অবস্থা হল তা অতীতের ইতিহাস আমাদেরকে বলে দেয় তার একদিন পর আইনমন্ত্রী একটি প্রোগ্রামে বিচার বিভাগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন বিচার বিভাগ যেন তাদের সিমা অতিক্রম না করে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এবং আইন মন্ত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এই বক্তব্য গুলো বিচার বিভাগের প্রতিএকটি হুমকি যা খুব সহিজেই প্রতীয়মান হয় এবং  এটি বিচার বিভাগকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে বাধার সৃষ্টি করবে বলে আমার মনে হয়
এই পুরো বিষয় থেকে একটি সন্দেহের  সৃষ্টি হয় যে বিচার বিভাগ কি পারবে  স্বাধীন ভাবে কাজ করে সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের  আধীকার ফিরিয়ে দিতে থাইল্যান্ডের আদালতের মত বাংলাদেশে জানুয়ারীর  বিরুধীদল বিহীন এবং ভোটার বিহীন এই নির্বাচনকে বাতিল করতে, না  শাসকের চাপে আইন শাসিত হবে তাই আমার মনে হয়, সময় এসেছে এখন আদালতের ফাইলান পরীক্ষা দেবার আইনের শাসন  প্রতিস্তিত হবে না শাসকরা আইনকে শাসিত করবে 

              
  


No comments:

Post a Comment