Thursday, July 17, 2014

চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামীলীগ

নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর বীভৎস হত্যাকান্ড সহ কিছু অঘটনকে আপাত সামাল দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও বাস্তবে কঠিন সময়ের মুখোমুখি আওয়ামী লীগদলীয় সরকার। দলের একাধিক প্রবীণ নেতা ও সাবেক কয়েকজন আমলা মনে করেন, অবনতিশীল কিছু বিষয়ের দ্রুত সমাধান না করতে পারলে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করা অথবা দীর্ঘ স্থায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় থাকা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এই বিজ্ঞজনরা বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন সামাল দিতে সরকারের হয়তো তেমন বেগ পেতে হবে না; কিন্তু সরকারের জন্য তার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে দুর্নীতি, নিজের দলের বিশৃক্সখলা ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগের স্থবিরতা।
রাজনৈতিক কাঠামো ও সরকারি প্রশাসনযন্ত্র উভয় ক্ষেত্রে লাগামছাড়া দুর্নীতির প্রকোপ, দলীয় নেতাকর্মীদের বেপরোয়া হয়ে বাণিজ্যে নেমে পড়া, ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অনৈক্য, বেসরকারি বিনিয়োগে আস্থাহীন
পরিবেশ দূর করতে না পারা, ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়া, মন্ত্রীদের কাজে গতিহীনতা, সাংসদদের ঘিরে সর্বত্র সুবিধাবাদী চক্রের উত্থান এবং দেশে কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়ি ও লাগামহীন আচরণে সরকারের জনপ্রিয়তা হারানোর আশঙ্কা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে সরকারের জন্য বড় ধরনের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক বায়েজিদ সরকার উপস্থাপিত এক প্রবন্ধে সরকারের জন্য প্রধান যে দুটি আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে তা হচ্ছে-রাজনৈতিক অনিশ্চতায় কোনো বিনিয়োগকারীর সাহস করে নতুন উদ্যোগে এগিয়ে না আসা এবং ব্যাংকিং খাতে হলমার্কের মতো কেলেঙ্কারির কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অতিমাত্রায় সতর্কতায় ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক ধারা সৃষ্টি হওয়া। দেশের অর্থনৈতিক খাতে এ দুটি বিষয়ই চরমভাবে নেতিবাচক।
বায়েজিদ সরকার তার প্রবন্ধে এই মর্মে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, সরকারি বিনিয়োগে তেমন কোনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় না। দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে বেসরকারি বিনিয়োগ। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগের বেলায় এক ধরনের আস্থাহীনতায় ভুগছেন নতুন উদ্যোক্তারা। এই নতুন বিনিয়োগকারীরা এজন্য দায়ী করছেন রাজনৈতিক অস্থিরতাকে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণ সুবিধা একটি বড় ধরনের উপাদান। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রপের জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি তসরুপ করার ঘটনা ধরা পড়ার পর প্রায় সব ব্যাংকই ঋণ প্রদানে অতিমাত্রায় সতর্ক। তারা বড় আকারের ঋণ বিতরণের ঝুঁকি নিতে নারাজ। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন ঋণের তেমন প্রস্তাব আসছে না। বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঝুঁকি নেওয়ার চেয়ে নিজেদের চাকরিটাকেই বড় করে দেখছেন।
এ দুটি বিষয় সরকারকে গুরুত্ব সহকারে সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র একজন নেতা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত বিগত সরকারের আমলের একজন মন্ত্রী, দুই জন প্রতিমন্ত্রী ও সাতজন সংসদ সদস্য এখন অতিরিক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কাঠগড়ায়। দলীয় সরকারের এই মন্ত্রী-সাংসদদের দুর্নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের লোক হওয়া সত্ত্বেও সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় কোনো নগ্ন হস্তক্ষেপ করেনি-এটা ভালো। আবার খারাপ দিক হচ্ছে বর্তমান সময়ের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীই চলছেন দুদকের জালে আটকা পড়া সাবেক মন্ত্রীদের মতোই। ইতোমধ্যে কয়েকজন মন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে তাদের দফতরের প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
সামগ্রিক দিক থেকে বলা যায় যে, যদিও সরকার বাইরে দেখাচ্ছে যে তারা খুব ভাল আছে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা মনে হয় না। কারন সরকারকে যে বিষয় গুলো মোকাবেলা করে উটতে হবে তা সত্যি কি সরকার পারবে সেটা এখন গুরুত পূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইন শৃঙ্গলা চরম ভাবে অবনতি অর্থনৈতিক ভাবে সরকার হুমকির সম্মুখিল হচ্ছে দিনের পর দিন থেকে। বিদেশেী বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। যা দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
সরকার যদি আইন শৃঙ্গলার উন্নতি, গ্রহনযোগ্য নির্বাচন, দুর্নীতি,দলের ভিতরের কুন্দল এবং বিদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে না পারে তাহলে দেশের অবস্থা ভয়ানক পরিস্তিতি দিকে অগ্রসর হবে বলে আমার মনে হয়।        


                                                                
                                                                       
                                                                          মোঃ সাইদুর রহমান