Saturday, August 23, 2014

সম্প্রচার কমিশন হবে একটি ‘জো হুজুর’ বা আজ্ঞাবাহী কমিশন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সরকার প্রণয়ন করল সম্প্রচার নীতিমালা।  অনেকে মনে করেন যে, এমনিতে বাংলাদেশের মিডিয়া গুলো কোন না কোন ভাবে government  নিয়ন্ত্রন করছে  যাহা প্রকাশে হউক বা আর গোপনে হয় তার উপরে যদি এই সম্প্রচার নীতি মালা কার্যকর করা হয় তাহলে সংবাদ মাধ্যম গুলোর কোন স্বাধীনতা থাকবে না।
একদিকে সরকার বলছে যে,এই সম্প্রচার নীতিমালা মাধমে সংবাদ মাধ্যম গুলো আরও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করবে কিন্তু সরকার এ কথা বলেছে না যে দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি,আমার দেশ পত্রিকা কবে তাদের স্বাধীনটা ভোগ করবে।
এইবার আসুন দেখে নেই ইতিহাসের পাতা থেকে সংবাদ  মাধ্যমের  প্রতি  আওয়ামীলীগের কিছু চিন্তা ধারণা এবং আচরণ। আমার কাছে মনে হয় সেগুলো হয়ত আমাদেরকে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে যে, আওয়ামীলীগ  সরকারের আমলে যদি এই সম্প্রচার নীতিমালা আইন আকারে  প্রণয়ন করা হয় তাহলে কি অবস্থা হতে পারে।  
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ২য় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। এবার ক্ষমতায় এসে তারা ভিন্ন ভাবে সংবাদপত্র দলন করা শুরু করে। দৈনিক বাংলা’, ‘বাংলাদেশ টাইমসএবং সাপ্তাহিক বিচিত্রাবন্ধ করা হয়। ২০০৮ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সালে দৈনিক আমারদেশ বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে দিগন্ত টিভিএবং ইসলামিক টিভিও বন্ধ করা হয়। এর আগে তারা চ্যানেল ওয়াননামক টিভিটি বন্ধ করে দেয়। আমার দেশের সম্পাদক মাহমুুদুর রহমানকে বছরের পর বছর কারাগারের অন্ধকারে পচানো হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাকেরপ্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে একাধিক বার গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কোন বার তাকে এত দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়নি। এছাড়া কারাগারের ভেতরেও তার সাথে ভিআইপির মত ব্যবহার করা হয়। চতুর্থ মেয়াদে অর্থাৎ গত ৫ই জানুয়ারী র‌্যাব এবং পুলিশের জোরে ক্ষমতায় এসে এবার গ্রহণ করা হল জাতীয় সম্প্রচার নীতি। এখন  মনে অজান্তে  প্রস্ন আসে যে, যে সরকার বন্ধ মিডিয়া  গুলোকে খুলে দিচ্ছে না তারা কি করে এই সম্প্রচার নিতিমালার মাধমে সংবাদ মাধ্যমের  স্বাধীনতাকে  আরও বিকশিত করবে।

বাংলাদেশের মত একটি স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের নীতিমালার কোন প্রয়োজন নাই। বিগত ৪৩ বছর ধরে এ দেশে সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন তাদের সম্পাদকীয় এবং সম্প্রচার নীতিতে সব সময় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব হীনতার একটি উদাহরণও চোখে পড়ে না। তারপরেও বলতে চাই যে, এই ধরনের নীতি যদি আদতেই প্রণয়ন করতেই হয় তাহলে সেটি করবে একটি সম্প্রচার কমিশন, সরকার নয়। অথচ সরকার আগে ভাগেই সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন করেছে, সেটি মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করেছে এবং গত বৃহস্পতিবার গেজেট নোটিফিকেশন করে সেটি সার্কুলেট করেছে। এরপর নাকি সম্প্রচার কমিশন গঠিত হবে। একথা বললে অযৌক্তিক হবে না যে সম্প্রচার নীতিমালা প্রস্তাবিত কমিশনের সামনে একটি গাইড লাইন হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং সেই সম্প্রচার কমিশন হবে একটি জো হুজুরবা আজ্ঞাবাহী কমিশন। সরকার এখানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছে। মন্ত্রীসভা অনুমোদিত নীতিমালায় এমন সব বিধান রয়েছে যে সরকার ইচ্ছা করলে যে কোন সময় যে কোন টেলিভিশন বা রেডিও যে কোন অযুহাতে নীতিমালার অপব্যাখ্যা করে বন্ধ করে দিতে পারে। সম্ভবত সেটি আশঙ্কা করেই আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, যদি এখনই এই সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে এখনই প্রতিবাদ গড়ে তোলা না যায় তাহলে আগামী জানুয়ারী ফ্রেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই এক বা একাধিক মিডিয়া সরকারি রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্যই বলা হচ্ছে যে, এই আইন হল একটি কুখ্যাত কালা আইন এবং যেদিন থেকে এই আইনটি কার্যকর হবে সে দিনটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি কৃষ্ণ দিবস।
মু সাইদুর রহমান 

No comments:

Post a Comment