Saturday, July 5, 2014

দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল


যখন আমি অনেক আশা নিয়ে নতুন কিছু দেখব নতুন কিছু শিখব বলে  টিভির সামনে হাতে রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে বসি সংসদ অধিবেশন দেখার জন্য তখন মনের অজান্তে একটি কথা মনে পড়ে যায়। যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমাদের শিক্ষক একটা ভাব সম্প্রসারন পড়াতেন। নাম ছিল দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। এখন এই কথাটি বারবার মনে পড়ে যখন দেখি আমাদের দেশের সরকার দল এবং অনেকে বলে গৃহপালিত বিরুধী দল সংসদে বসে।

সংসদের অধিবেশন চলাকালে অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের আচরণ কি হবে তা স্পষ্ট করা আছে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে। এতে সংসদ সদস্যদের জন্য পালনীয় ১১টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই নবীন সদস্যদের। অন্যদিকে জেষ্ঠ্য সদস্যরাও প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন।

আচরণবিধির (৩) নম্বর ধারায় রয়েছে, ‘সংসদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো বই, সংবাদপত্র বা চিঠিপত্র পাঠ করিবেন না।
অধিবেশন কক্ষে প্রায় প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে থাকেন সরকার দলীয় জেষ্ঠ্য সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

অধিবেশন কক্ষে ঘুমানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে আসন পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের। ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারি থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারিতে দেয়া হলেও তার ঘুম কাটছে না। একই অভিযোগ রয়েছে আরেক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও সাবেক শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে।

আচরণবিধির (৮) নম্বর ধারায় সংসদে বক্তৃতা ব্যতিরেকে নীরবতা পালনের নির্দেশ দেয়া হলেও কেউই তা মানেন না। সময় পেলেই দুই-তিনজন সদস্য এক জায়গায় বসে আড্ডায় মেতে উঠেন। কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
চলতি অধিবেশনে একদিন কক্ষের অভ্যন্তরেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বরগুনা-১ আসনের সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। পরে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এসে শম্ভুকে শান্ত করেন। এর আগে চিফ হুইপ বার্তা পাঠিয়েও তাদের থামাতে ব্যর্থ হন।

(৪) নম্বর ধারায় সভাপতি ও বক্তৃতারত সদস্যের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন সদস্য এ আচরণবিধি মানেন না। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও স্বতন্ত্র সদস্যদের জোট সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম।

আচরণবিধির (১) নম্বর ধারায় সংসদে প্রবেশ করার বা সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় এবং তার আসন গ্রহণ বা ত্যাগ করার সময়ে সভাপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।
কিন্তু অনেক সদস্য সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় ফ্রি স্টাইলে চলাচল করেন। অনেকে আবার পশ্চাতদেশ প্রদর্শন করে বেরিয়ে যান।

একজন আরেকজনের চেয়ারে বসা নিষেধ থাকলেও কখনোই ফাঁকা থাকে না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আসনটি। তার অনুপস্থিতিতে দলের জেষ্ঠ্য সদস্যদের অনেকেই ওই চেয়ারে বসে থাকেন। অন্য সদস্যদের চেয়ার নিয়েও এ ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে।
একজন অন্যজনের চেয়ারে বসার ঘটনায় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী নবম সংসদের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এবার চুপচাপ। বাকি অন্যান্য আচরণবিধি ভঙের বিষয়টি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

কয়েক দিন আগে দেখলাম পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অনেকে বলে গৃহপালিত বিরুধী দলের নেতৃর মধ্যে। বিষয় হল যে কে বিদেশি পানি পান করেন আমার কে দেশি পান করেন। যে সংসদে জাতীর আগামী দিনের পরিকল্পনা তৈরি করা হবে কিন্তু সেটা না করে সেখানে পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছেন দুই নেত্রী ।

গত কয়েক দিন আগে দেখলাম সাবেক পদ বিহীন মন্তী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত খুব আক্ষেপ করে বললেন যে, বাজেট অধিবেশনে কিসের উপর আলোচনা ও বক্তিতা রাখব যেখানে যিনি বাজেট পেশ করলেন তিনি সংসদে উপস্তিত নাই। এই হচ্ছে আমাদের সংসদ আর সংসদ সদস্যরা।
পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করব। আমাদের দেশের যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের মান মর্যাদা একটু বেশি বেড়ে গেছে সংসদ সদস্য হওয়ার পর । তাই তারা সব জায়গায় এবং সব অনুস্তানে যাওয়া সম্ভব হবে না সামাজিক মান মর্যাদার কথা চিন্তা করে।  তবে তাদের জন্য এই সংসদ একটি সুবর্ণ সুযোগ। 

একটু পরিষ্কার করে বললে আমাদের বুজে আসবে। আমাদের সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের মান মর্যাদার জন্য বাউল সম্রাট মমতাজের  পালা গান যাত্রায় গিয়ে দেখা সম্ভব হবে না। তাই তাদের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ যে সংসদের ভিতরে মমতাজের যাত্রা গান শুনতে পারবেন।
গত কয়েকদিন আগে সংসদের ভিতরে মমতাজের কনসার্ট দেখে অনেক ভাল লাগব। বাংলাদেশের সংসদের এই যেন এক নতুন মাত্রা যোগ হল।

কষ্ট লাগে এই জন্য যে,জনগনের ট্যাক্সের টাকায় air-condition রুমের মধ্যে বসে জাতীর সামনে তামাশা করা হচ্ছে বিনা ভোটে জয়ী সংসদ সদস্যরা।

তাই আমার কাছে মনে হয় যে, ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল’  

No comments:

Post a Comment