Thursday, May 29, 2014

আইনের শাসন নয় আইনকে শাসন করা হচ্ছে

মোঃ সাইদুর রাহমান, লন্ডনঃ কয়েক দিন আগে সারা পৃথিবীতে বড়বড় হেডলাইনে নিউজ প্রকাশিত হয়েছিলো যে, থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রা ও ৯ জন মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি নিয়োগ করা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের নভেম্বরে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে থাইল্যান্ডে। এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হয়। বিরোধী দল সেই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বাতিল হয়ে যায় সেই নির্বাচন। আদালতের রায়ে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানকে বদলি করার ক্ষেত্রে অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিয়েছিলেন ইংলাক এবং সেই জন্য তাকে প্রধান মন্তী পদ থেকে সরে যেথে হয়েছে এখন ইংলাকের বিরদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে যে তিনি বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছিলেন কিন্তু এখন সেই ধান সরকার বিক্রি করতে পারছেন না ।


আমার লেখার বিষয়টা সেটা না আমি শুধু মাত্র দেখাতে চাচ্ছি যে, থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত কতটা শক্তিশালী। শুধু মাত্র থাইল্যান্ড না পৃথিবীর অনেক দেশে এই রকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। সুতরাং এ থেকে সুস্পষ্ট বুজা যায় যে, আইনের শাসন কতটা শক্তিশালী ঐ সমস্ত দেশ গুলোতে।
ফিয়ে আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেটা বাংলাদেশের আইন হউক বা পৃথিবীর যে কোন দেশের আইন হউক। কোন আদালত যে আইনের মাধ্যমে যে রায় দিবে আমি সেটাতে শ্রদ্ধাশীল কিন্তু আমার বাক স্বাধীনতা আমাকে লেখতে বাধ্য করে যখন আমি দেখি আইন আজ শাসকের কাছে বন্ধি । মনে অজান্তে নিজে নিজেকে প্রশ্ন করি যে, সত্যি কি আমরা আইনের শাসন পাচ্ছি, না কোন শাসক আইনকে শাসন করছে। আইন কি সবার জন্য সমান? তাই আমার এই লেখাটি। আমি আমার এই লেখাটির মধ্য দিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব যে, বাংলাদেশে আইনের শাসন না হয়ে কি ভাবে আইন কে শাসন করা হচ্ছে।

প্রথমত, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার জন্য ঘোষণা দেয় এবং বলা হয় বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জন্য ১/১১ মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো সেই জন্য আগামী দিনে যাথে ১/১১ মত কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে না পারে যেই জন্য এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হউক এবং সেটা পরিবরতিতে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অনেক কিছুর পর এবং অনেক দিন পর আদালত যখন রায় দেন তখন সেই রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়। তার মানে এই যে, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় নাই তাই আদালত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় নাই তবে লক্ষণীয় বিষয় যে ,আদালত সেই রায়ে বলেছিলে আরও দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আধীনে নির্বাচন হতে পারে যদি সংসদ সেটা চায় কিন্তু পরবর্তীতে সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চায়নি তাই এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিগত নির্বাচন হয় নাই সেই সাথে আগামীতে কোন নির্বাচন হবে না। এখানে লক্ষ্য করার মত বিষয় হল, আইন চায় যে আরও দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে কিন্তু শাসকরা সেটা চায় না কারন তারা ক্ষমতায় আসার পর বলে দিয়াছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হবে। সুতরাং এখানে শাসকরা কি আইনকে শাসন করছে না ?

১/১১ সরকারের সময় বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনিতিবিদের উপর মামলা হয়েছিলো এবং সেই মামলা গুলোর মধ্যে বেশির ভাগ মামলা ছিল দুর্নীতির। আওয়ামীলীগের নেতাদের উপর যে মামলা হয়েছিলো বিএনপি নেতাদের উপর সেই একই মামলা করা হয়েছিলো এবং সেই সাথে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দুই প্রধান নেত্রীর উপর মামলা করা হয়। ১/১১ সময় দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতাদেরকে দুর্নীতির মামলায় জেলে ঢোকানো হয় এবং সেই সাথে দুই প্রধান নেত্রীকে জেলে ঢোকানো হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হয়ে সরকার গটন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্দে ১/১১ সময় যে মামলা করা হয়েছিলো যে গুলো হারিয়ে গেল এক অজানা দেশে কিন্তু বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর করা মামলা গুলো আজও রয়ে গেল । আমরা জানি আইন সবার জন্য সমান। আইনের শাসন সবার জন্য। যদি আইনের শাসন সবার জন্য সমান হয় তাহলে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের উপ ? কেন শাসকদের উপর দায়ের করা মামলা গুলো হারিয়ে গেল ? তাহলে এ কথা কি বলা যায় যে, শাসকরা ক্ষমতায় আছে তাই তাদের উপর আইনের শাসন হচ্ছে না বরং শাসকরা আইনকে শাসন করা হচ্ছে ।

যুদ্ধ অপরাধীর বিচার ,ওয়ার ক্রাইম ট্রাইবুনাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত এবং সেই সাথে সমালোচিত ট্রাইব্যুনাল এবং আমি বলতে পারে যে এই রকম ট্রাইব্যুনাল পৃথিবীর কোথায় আছে কি না এবং সেই সাথে ট্রাইবুনাল এক এর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং আহমদ জিয়া উদ্দিনের মধ্যকার স্ক্যইপ আলাপ শুনলেই আপনাদের আর বুঝতে বাকি থাকবে না যে,বাংলাদেশে কিভাবে শাসকরা আইনকে শাসন করছে।

আমরা জানি যে আইন চলবে তার নিজের গতিতে কিন্ত আওয়ামীলীগের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা রায়ের আগে বলে দিচ্ছেন যে যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্তদের রায় কি হবে এবং কখন হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে যে, আইন যদি আইনের গতিতে চলত তাহলে মন্ত্রি, এমপিরা তো জানতে না যে কখন রায় হবে বা কি রায় হতে পারে।

আপনারা যদি স্কাইপ আলোচনাটি শুনেন তাহলে দেখতে পারবেন যে, কিভাবে আইন প্রতিমন্তী তাড়াতাড়ি রায় দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রধানকে চাপ দিচ্ছেন তাহলে সবার উপরে যদি আইন হয় তাহলে শাসকরা কিভাবে আইনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন এবং সেই সাথে লক্ষণীয় বিষয় যে, ট্রাইব্যুনাল প্রধান ও জিয়াউদ্দিন মধ্যকার আলোচনার মাঝে নিজামুল হক নাসিম বলেছেন যে, সরকার গেছে পাগল হইয়া তারা একটি রায় চায়। অর্থাৎ অপরাধ যাই হক না কেন একটি রায় সরকারকে আদালত দিতে হবে। লক্ষ্য করুন যে আইন তার নিজের গতিতে চলার কথা ছিল যে আইন ছিল সবার উপরে যে আইন ছিল সবার জন্য সমান সেই আইনকে শাসকরা কিভাবে নিজের ইচ্ছায় শাসন করছে।
শেষ করি সাম্প্রতিক একটি বিষয় দিয়ে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা হল না-গঞ্জে সাত খুন। এই খুনের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে রাপিড অ্যাকশন ব্যটিলিয়নের তিন জন কর্মকর্তার। সংবাদ পত্রে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার ঢেউ উঠে। বাধ্য হয়ে ঐ তিন জন কে অবসরে পাঠানো হয় কিন্ত তাদের বিপক্ষে সরাসরি খুনের অভিযোগ পাওয়ার পরও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় নাই। পরবর্তীতে আদালত আদেশ দেয় তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য। কি অবাক দেশে আমরা বসবাস করছি সেখানে একজন খুনিকে গ্রেফতার করতে আদালত নির্দেশ দিতে হয়। কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় না এর মুল কারন হল তিনি একজন মন্ত্রীর জামাতা?

গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে জামাতের ২১ জন নেতা কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে কিন্তু কেন ? কারন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল তারা গোপন মিটিং করছিল। একটু চিন্তা করেন ২১ জন মানুষ মিলে কি কোন গোপন মিটিং হয়। সেখানে আমাদের দেশে ২১ জন মানুষ একত্রিত হয়ে একটি পাবলিক জনসভা হয়ে যায়। প্রশ্ন হল একটি গোপন মিটিং করার জন্য যদি বিনা অনুমতিতে ২১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে তাহলে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কেন ঐ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয় না।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের আইন। আইন সবার জন্য সমান এই কথা বলতে বলতে শাসকরা আইনকে বেধে রেখেছেন চার কোন দেয়ালের মাঝে। আইন আজ শাসক দলের কাছে অসহায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারবে  ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে আইন শৃঙ্গলার উন্নতি হবে না।

No comments:

Post a Comment